দেশে এখনও করোনামুক্ত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি
৬৪ টি জেলার মধ্যে একমাত্র করোনামুক্ত রয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি।
শনিবার ( ২ মে ) সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে এখনো করোনামুক্ত রয়েছে রাঙামাটি। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে একমাত্র রাঙামাটি ছাড়া বাকী ৬৩ টি জেলায় করোনা আক্রান্ত। রাঙামাটি একমাত্র জেলা যেখানে এখনো করোনা পজিটিভ রোগি পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রতিবেশী জেলা খাগড়াছড়িতে ও বান্দরবানে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে আয়তনের দেশের সবচে বড় জেলা রাঙামাটি। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুয়ায়ী রাঙামাটির জনসংখ্যা ৬ লক্ষ ২০ হাজার ২১৪ জন।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এই জেলা থেকে ২ মে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ২৪৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে,এদের মধ্যে ১৪০ জনের রিপোর্ট এসেছে এবং প্রতিটি রিপোর্টই নেগেটিভ। বাকি ১০৪ টি রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে। এদিকে, রাঙামাটি জেলার মোট ১৮০১ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে,এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ১২৯১ জন, এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছে ৫১০ জন ও কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে ৮৭১ জন।
এছাড়া রাঙামাটির রাজস্থলী,বাঘাইছড়ি এবং রাঙামাটি সদরে তিনজন মারা যান করোনার উপসর্গ নিয়ে। এদের মধ্যে দুইজন আইসোলেশনে ছিলেন। এদের তিনজনকেই করোনা রোগীদের মতোই দাফন ও দাহ করা হয়। কিন্তু রিপোর্টে তিনজনের কারো শরীরেই করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে, ১৬ এপ্রিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের এক ব্যক্তির শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর বান্দরবানের থানচি, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশ সদস্যসহ আরও চারজন আক্রান্ত হয়ে এই পর্যন্ত মোট ৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের ল্যাব টেস্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত বুধবার ২৯ এপ্রিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় প্রথম করোনা রোগী করোনা শনাক্ত হওয়া খাগড়াছড়িতে । এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে করোনা সংক্রমিত হলো। তবে এখনো সংক্রমণের বাহিরে রয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। অবশ্য রাঙামাটির লংগদুর এক বাসিন্দা পেশায় ট্রাকচালক হবিগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। রাঙামাটির বেতবুনিয়ার এক মারমা যুবক নারায়নগঞ্জে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় করোনাক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং ভৈরবের এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত রাঙামাটির মেয়ে এক সরকারি কর্মকর্তাও করোনা পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যদিকে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মেয়ে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৯ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটি এখনো কিভাবে করোনামুক্ত থাকলো এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর(এনডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন,পুলিশ ও সেনাবাহিনী সকলের সাথে সমন্বয় করে আমরা রাঙামাটিকে করোনা মুক্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, রাঙামাটিতে আমাদের যে ১২ টি চেক পোষ্ট রয়েছে সেগুলোতে কড়া নজরদারী রেখেছি আইনশৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে। এবং শহরের বাজার, রাস্তাঘাট ও জনবহুল এলাকায় জনসমাগম যাতে না ঘটে এবং সকলে যাতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে লক্ষ্যে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি নিয়মিত। এনডিসি আরো বলেন, আমরা রাঙামাটি শহরে প্রতিদিন ৫ টি মোবাইল টিম পরিচালনা করছি এবং এ পর্যন্ত জনগনকেও সচেতন করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, যারা রাঙামাটির বাহির থেকে আসছে তাদের বিষয়ে আমাদের কড়া নজরদারী রয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগ এর মাধ্যমে তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে নিয়মিত।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা: মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা শুরু থেকেই রাঙামাটির জনগণকে সচেতন করার জন্য শহর থেকে শুরু করে দুর্গম অঞ্চলগুলোর জনসাধারনের মাঝে স্বাস্থ্য কর্মীর মাধ্যমে করোনা সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ,মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্পর্কে অবহিত করে আসছি। এর পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ডা: মোস্তফা কামাল আরো বলেন, আমরা নূন্যতম সর্দি কাশি থাকলেও তাদের সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত রাঙামাটি করোনামুক্ত থাকার কারণ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, রাঙামাটির প্রশাসন সারাদেশের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম ছিলেন। শুরু থেকেই রাঙামাটির সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে বাইরে থাকা মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিন ও প্রাতিষ্ঠানকি কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করেছেন। কাউকেই ছাড় দেয়নি। জেলার মানুষও অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করেছেন।
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শিল্পী রানী রায় বলেন, আমরা প্রথম থেকেই প্রশাসনের সকলে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের চেষ্টা ও রাঙামাটির জনগনের সহযোগিতা ওসচেতনতায় এখনো আমরা করোনামুক্ত আছি।তিনি বলেন, অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাঙামাটির বাহির থেকে কাউকে ঢুকতে এবং রাঙামাটি থেকে বের হতে দেয়নি।বাহির থেকে কেউ রাঙামাটিতে আসলেও তার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা শহরের বনরুপা, কলেজ গেইট এলাকার বাজার সামাজিক দূরেত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্থানান্তর করে মাঠে নিয়ে গেছি। শিল্পী রানী রায় আরো বলেন, এমনকি চাল বিতরন কার্যক্রমেও সামজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাঙামাটি শহরসহ দশ উপজেলার ইউএনওর মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের নিরাপদ থাকতে হলে সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।রাঙামাটি জেলায় প্রবেশের যে পথগুলো আছে,সবগুলো পথ আমরা আরো কঠোর করেছি। সবাইকে সচেতন হওয়ান কোন বিকল্প নেই।তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে ঘর থেকে বের না হয়।সকলে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।
নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙামাটি, ফোকাস চট্টগ্রাম ডটকম